
যেভাবে মন থেকে কোনো কিছু মুছে ফেলবেন
মন থেকে কোনো কিছু পুরোপুরি মুছে ফেলা কঠিন হতে পারে, বিশেষ করে যদি তা গভীর বা বেদনাদায়ক স্মৃতি হয়। তবে কিছু কৌশল অবলম্বন করে আপনি সেই স্মৃতির প্রভাব কমাতে এবং সেগুলোকে আপনার মন থেকে দূরে রাখতে সাহায্য করতে পারেন। এখানে কিছু কার্যকর কৌশল দেওয়া হলো:
১. স্মৃতিকে চিহ্নিত করুন এবং এর মুখোমুখি হন:
* প্রথমে সেই স্মৃতি বা ভাবনাকে চিহ্নিত করুন যা আপনি ভুলতে চান।
* এর সাথে যুক্ত অনুভূতিগুলোকে এড়িয়ে না গিয়ে সেগুলো অনুভব করার চেষ্টা করুন। অনেক সময় আমরা কোনো স্মৃতিকে যত বেশি এড়িয়ে যেতে চাই, তা তত বেশি আমাদের পিছু নেয়।
২. অনুভূতির প্রক্রিয়াকরণ এবং প্রকাশ:
* আপনার অনুভূতিগুলোকে জার্নাল লেখার মাধ্যমে, কোনো বিশ্বস্ত বন্ধু বা পরিবারের সদস্যের সাথে কথা বলার মাধ্যমে, অথবা কোনো থেরাপিস্টের সাথে আলোচনা করার মাধ্যমে প্রকাশ করুন। অনুভূতিগুলোকে প্রকাশ করলে সেগুলো হালকা হতে পারে।
* যদি স্মৃতিটি বেদনাদায়ক হয়, তবে নিজেকে ক্ষমা করার চেষ্টা করুন (যদি কোনো ভুল করে থাকেন) এবং অন্যদের ক্ষমা করুন (যদি তারা আপনাকে আঘাত করে থাকে)।
৩. ট্রিগারগুলো চিহ্নিত করুন এবং এড়িয়ে চলুন:
* কোন জিনিস, স্থান, শব্দ বা গন্ধ আপনাকে সেই স্মৃতি মনে করিয়ে দেয় তা খুঁজে বের করুন।
* সম্ভব হলে সেই ট্রিগারগুলো এড়িয়ে চলুন। যদি পুরোপুরি এড়িয়ে চলা সম্ভব না হয়, তবে সচেতনভাবে সেগুলোর প্রভাব কমানোর চেষ্টা করুন।
৪. স্মৃতি প্রতিস্থাপন বা পুনঃস্থাপন:
* যখন কোনো খারাপ স্মৃতি মনে আসে, তখন সচেতনভাবে সেটিকে একটি ভালো বা নিরপেক্ষ স্মৃতি দিয়ে প্রতিস্থাপন করার চেষ্টা করুন। উদাহরণস্বরূপ, যদি কোনো নির্দিষ্ট স্থানে আপনার খারাপ অভিজ্ঞতা হয়ে থাকে, তবে সেই স্থানে আপনার অন্য কোনো ভালো স্মৃতি মনে করার চেষ্টা করুন।
* স্মৃতির অর্থ পরিবর্তন করার চেষ্টা করুন। কোনো খারাপ ঘটনা থেকে আপনি কী শিখেছেন বা কীভাবে এটি আপনাকে শক্তিশালী করেছে, সেদিকে মনোযোগ দিন।
৫. মননশীলতা (Mindfulness) অনুশীলন:
* মননশীলতা আপনাকে বর্তমান মুহূর্তে মনোযোগ দিতে সাহায্য করে এবং অপ্রয়োজনীয় ভাবনা বা স্মৃতি থেকে দূরে থাকতে সাহায্য করে।
* প্রতিদিন কয়েক মিনিটের জন্য মেডিটেশন বা শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম অনুশীলন করুন। যখনই কোনো অবাঞ্ছিত স্মৃতি মনে আসে, সেটিকে একটি মেঘের মতো ভেসে যেতে দিন এবং আপনার মনোযোগ বর্তমানে ফিরিয়ে আনুন।
৬. নতুন স্মৃতি তৈরি করুন:
* নতুন নতুন ইতিবাচক অভিজ্ঞতা তৈরি করার চেষ্টা করুন। নতুন শখ, নতুন কাজ, নতুন স্থান ভ্রমণ, বা নতুন মানুষের সাথে মিশে নতুন স্মৃতি তৈরি করলে পুরনো স্মৃতির প্রভাব কমে আসতে পারে।
* যে বিষয়বস্তু বা ঘটনার সঙ্গে আপনার খারাপ স্মৃতি জড়িয়ে আছে, সেগুলোর সঙ্গে নতুন এবং ভালো স্মৃতি তৈরি করার চেষ্টা করুন।
৭. নিজেকে ব্যস্ত রাখুন:
* আপনার পছন্দের কাজগুলো করুন, নতুন কিছু শিখুন, অথবা সামাজিক কার্যক্রমে অংশ নিন। নিজেকে ব্যস্ত রাখলে অবাঞ্ছিত ভাবনাগুলোর জন্য কম সময় থাকে।
৮. স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন:
* পর্যাপ্ত ঘুম, সুষম খাবার এবং নিয়মিত ব্যায়াম মানসিক স্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এগুলো মানসিক চাপ কমাতে এবং ইতিবাচক মনোভাব বজায় রাখতে সাহায্য করে, যা খারাপ স্মৃতি থেকে মুক্তি পেতে সহায়ক।
৯. পেশাদার সাহায্য নিন:
* যদি স্মৃতিগুলো আপনার দৈনন্দিন জীবনকে মারাত্মকভাবে প্রভাবিত করে বা আপনি নিজে এগুলো থেকে মুক্তি পেতে না পারেন, তবে একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞের (যেমন: থেরাপিস্ট বা কাউন্সেলর) সাহায্য নিন। কগনিটিভ বিহেভিওরাল থেরাপি (CBT) এবং এক্সপোজার থেরাপির মতো চিকিৎসা পদ্ধতি অবাঞ্ছিত ভাবনা ও স্মৃতি মোকাবিলায় খুব কার্যকর হতে পারে।
মনে রাখবেন, কোনো স্মৃতি রাতারাতি মুছে ফেলা সম্ভব নয়, এটি একটি প্রক্রিয়া। নিজেকে সময় দিন এবং ধৈর্য ধরুন। ধীরে ধীরে আপনি স্মৃতির
প্রভাব কমাতে সক্ষম হবেন।